কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের প্যাঁচারদ্বীপ সমুদ্রসৈকতে একসঙ্গে ১২৫টি ডিম পাড়ে ‘অলিভ রিডলে’ (জলপাই রঙের) প্রজাতির একটি মা কচ্ছপ। বালুচরে ডিম পাড়ার পর কচ্ছপটি নিজে একটা গর্ত খুঁড়ে তাতে ডিমগুলো রাখে।
তারপর বালু দিয়ে গর্তের ডিমগুলো চাপা দেয়। এরপর কচ্ছপটি পুরনায় ফিরে যায় গভীর সাগরের দিকে। ডিমগুলো সাদা, মুরগির ডিমের মত।
ডিমগুলো এখন বেসরকারি সংস্থা নেকমের একটি হ্যাচারীতে সংরক্ষণ করা হয়েছে। ৩ মাস পর ডিমগুলো থেকে ফুটবে বাচ্চা। তখন ২-৩ দিন বয়সী বাচ্চাগুলো অবমুক্ত করা হবে সাগরে।
চাঁদনী রাতে নির্জন সৈকতে কচ্ছপের ডিম পাড়ার দুর্লভ দৃশ্যটি পযবেক্ষণ করেছিলেন বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনষ্টিটিউটের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ও সমুদ্র বিজ্ঞানী সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দার এবং নেকমের ব্যবস্থাপক আবদুল কাইয়ূম।
বিজ্ঞানী বেলাল হায়দার কচ্ছপের ডিম পাড়া নিয়ে চমকপ্রদ অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। দুই-তিন দিন বয়সী বাচ্চা গুলো যখন সাগরে অবমুক্ত করা হবে, তখন তারা ফিরে যাবে হাজার মাইল দূরে তাদের মা-বাবার আবাস স্থলে।
যদি অন্যকোন বিপর্যয় না ঘটে তবে এই বাচ্চা গুলো একদিন বড় হয়ে আবার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে কোন এক পূর্ণিমা রাতে ডিম পাড়ার জন্য এই সৈকতে ফিরে আসবে। যেখানে একদিন তাদের মা এসেছিল ডিম পাড়তে।
কীভাবে একটা কচ্ছপের বাচ্চা তার মায়ের আবাসস্থল চিহ্নিত করে হাজার হাজার মাইল বিপদসংকুল উত্তাল সাগর পাড়ি দিয়ে সেখানে পৌঁছে-তা বিষ্ময়কর ব্যাপার।
আবার প্রাপ্ত বয়সে ডিম পাড়ার সময় হলে সেই বাচ্চাগুলো কীভাবে হাজার মাইল দূর থেকে তার জন্মস্থান নিখুঁত ভাবে চিহ্নিত করে ঠিক সেখানেই ডিম পাড়তে আসে তা ভাবনার বিষয়। কচ্ছপের এমন জীবন রহস্য এখনো বিজ্ঞানীদের অজানা।
অথচ সমুদ্রের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাকারী, নিরীহ প্রাণীদের আমরা রক্ষা করতে পারছিনা।
লেখক: আব্দুল কুদ্দুস রানা
বিশেষ প্রতিবেদক ও অফিস প্রধান,
কক্সবাজার। দৈনিক প্রথম আলো।
Discussion about this post