ডেস্ক রিপোর্ট :
বরিশালের কোতয়ালী থানা এলাকায় মাদকসেবী ট্যাগ দিয়ে শিক্ষানবিশ আইনজীবী রেজাউল করিম রেজাকে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
রোববার (৩ জানুয়ারি) বিকেলে নগরীর সাগরদি এলাকায় প্রায় দেড়ঘণ্টা রাস্তা অবরোধ করে লাশ নিয়ে বিক্ষোভ করে ২৪নং ওয়ার্ড বাসিন্দারা। এতে দু’পাশে কয়েকশ যানবাহন আটকা পড়ে।
পরবর্তীতে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশ্বাসে রাস্তা থেকে অবরোধ তুলে নেন বিক্ষোভকারীরা।
বরিশাল মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) শাখা পুলিশের এসআই মহিউদ্দিন মাহির বিরুদ্ধে এই অভিযোগ। তার বিচারের দাবিতে ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করেন বিক্ষোভকারীরা। এসআই মহিউদ্দিন মাহির বাসভবন লক্ষ করে ইট-পাটকেলও নিক্ষেপ করেন তারা।
২৪নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি নাজমুল হুদা ও সাধারণ সম্পাদক সাফিন মাহামুদ তারেকসহ স্থানীয়রা বিচার দাবিতে আন্দোলন করেন।
স্থানীয়রা জানান, ময়নাতদন্ত শেষে রেজাউল করিম রেজার মরদেহ নিয়ে বাড়িতে আসেন স্বজনরা। এ সময় বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী রেজার মৃত্যুর ঘটনায় দোষী পুলিশ সদস্যের বিচার দাবি করে তার মরদেহ নিয়ে সাগরদী মাদ্রাসা সংলগ্ন মহাসড়কে যান। তারা সড়কটি অবরোধ করে আগুন ধরিয়ে বিক্ষোভ করেন। এতে বরিশাল নগরে চলাচলরত ছোট ছোট যানবাহন ছাড়াও দুরপাল্লার যাত্রী ও পণ্যবাহী পরিবহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে সন্ধ্যা ৬টার পর বরিশাল মেট্রোপলিটনের কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি শান্ত করেন। এরপর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
বিক্ষোভকারীরা নগর গোয়েন্দা পুলিশের এসআই ও সাগরদী এলাকার শেরে বাংলা সড়ক এলাকার বাসিন্দা মহিউদ্দিন মাহির বাসার সামনে গিয়েও বিক্ষোভ করেন। এ সময় বিক্ষোভকারীরা মহিউদ্দিন মাহির বাসভবন লক্ষ করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেন। এতে তার বাড়ির জানালার ১০টি মতো গ্লাস ভেঙ্গে যায়।
স্থানীয়রা জানান, অন্যায়ভাবে রেজাকে ধরে নিয়ে নির্যাতন করে তাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয় মহিউদ্দিন মাহি। এরআগেও তিনি সাগরদী এলাকায় বিভিন্নভাবে বিভিন্ন সময়ে ত্রাসের সৃষ্টি করেছেন। এসব ক্ষোভ থেকেই এখন সবাই মিলে এসআই মহিউদ্দিনের বিচারের দাবি জানানো হচ্ছে।
সার্বিক বিষয়ে কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল ইসলাম জানান, ময়নাতদন্ত শেষে রেজার মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু তারা মরদেহ নিয়ে সড়কে অবস্থান নেন। এতে করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে আর ওই সড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।
তিনি আরও জানান, যে অভিযোগ উঠেছে তা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর সত্যতা পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, বরিশাল আইন মহাবিদ্যালয়ের ছাত্র রেজাউল করিম রেজাকে মাদক দিয়ে ফাঁসানোর পর নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগ ওঠে বরিশাল মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এসআই মহিউদ্দিন মাহির বিরুদ্ধে। এরপর থেকেই মহিউদ্দিন মাহিসহ নির্যাতনকারী সব পুলিশ সদস্যর বিচার দাবি করে আসছিলেন পরিবার ও স্বজনরা।
মৃত রেজার বাবা ইউনুস মিয়া বলেন, গত মঙ্গলবার বরিশাল গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) এসআই মহিউদ্দিন তার ছেলেকে মাদকসেবী বলে ধরে নিয়ে যায়। এরপর তাকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে নির্মম নির্যাতন চালায়। গত শুক্রবার হাসপাতাল থেকে ফোন করে বলা হয়, তার ছেলে প্রিজন সেলে ভর্তি আছেন। তার প্রস্রাবের রাস্তা থেকে অতিরিক্ত রক্ত বের হচ্ছে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রেজাকে দুই ব্যাগ রক্তও দেয়া হয়। এসআই মহিউদ্দিনের নির্যাতনের তার ছেলে মারা গেছে বলে তিনি অভিযোগ করে এই বাবা।
এ বিষয়ে বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মো. শাহ আলম জানান, আমাদের এখানে যখন হাজতি হিসেবে আসে তখনই সে শারিরীক অসুস্থ ছিল ও বা পায়ের কুচকিতে ক্ষত ছিল।
অন্যদিকে বরিশালের কোতোয়ালি মডেল থানার ডিউটি অফিসার রুম্মান জানান, মেট্রো ডিবির এসআই মহিউদ্দিন ১০০ গ্রাম গাঁজা, এমপুল ইজিয়াম (২), ইনজেকশনসহ রেজাউল করিমকে আটক করে।
Discussion about this post